হারলেও বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিলো আরব আমিরাত

পরিকল্পনায় ছিল শুধু প্রস্তুতি ক্যাম্প। সুযোগ আসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলারও। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দুটি আন্তর্জাতিক হলেও এটা মূলত বাংলাদেশের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ। কিন্তু প্রস্তুতি সারতে গিয়ে অপ্রস্তুত বাংলাদেশ। যে আমিরাতের নিজেদের ক্রিকেটার নেই বললেই চলে, ভারত-পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত ক্রিকেটার নিয়ে যাদের দল গড়া; তাদেরই বিপক্ষেই দিশা হারিয়ে দিগ্বিদিক ছুটলো বাংলাদেশ। জিতলেও উঠে গেল অনেক প্রশ্ন।
রোবাবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আরব আমিরাতকে ৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। জিতলেও বাংলাদেশের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে স্বাগতিক দেশটি। জয় নিশ্চিত করতে ইনিংসের শেষ ওভারের চতুর্থ বল পর্যন্ত লড়তে হয় নুরুল হাসান সোহানের দলকে। বাকি থাকা দুই বল আমিরাতের ব্যাটসম্যানরা কেরতে পারলে গল্পটা ভিন্ন রকমও হতে পারতো।
আরব আমিরাতের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে জিততেও যখন এতোটা লড়াই করতে হয়, বিশ্বকাপের আগে সেটা চিন্তার কারণই হয়ে ওঠে। ব্যাটিং-বোলিং; কোনো বিভাগেই ছন্দময় বাংলাদেশের দেখা মেলেনি। ব্যাট হাতে কেবল ম্যাচসেরা আফিফ হোসেন ধ্রুবর ইনিংসটি ছিল কার্যকরী। অধিনায়ক সোহান রান পেলেও টি-টোয়েন্টির মেজাজে ব্যাট চালাতে পারেননি। এর আগে টপ অর্ডার বরাবরের মতোই ব্যর্থ হয়।
মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনদের মতো বোলার; যারা কিনা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন, তাদের নখন্তহীন বোলিংও বাংলাদেশের অন্যতম চিন্তার কারণ। এদিন সুবিধা করতে পারেননি নাসুম আহমেদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরাও। স্বস্তির জায়গা কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ ও শরিফুল ইসলাম। ফিল্ডিং ও বোলিংয়ে দারুণ ছিলেন মিরাজ। দুটি দারুণ ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি ৩টি উইকেটও নেন তিনি। শরিফুল সবচেয়ে কম রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ ৪৭ রানেরই ৪ উইকেট হারায়। এখান থেকে দলের হাল ধরে দারুণ এক জুটি গড়েন আফিফ ও সোহান। ষষ্ঠ উইকেটে তাদের রেকর্ড জুটিতে ৫ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে বাংলাদেশ। আফিফ-সোহান ছাড়া বাংলাদেশের কেউ ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি। জবাবে জয়ের একেবারে কাছে পৌঁছে যাওয়া আরব আমিরাত ১৯.৪ ওভারে ১০ উইকেটে ১৫১ রান তোলে।
শেষ দিন ওভারে আমিরাতের প্রয়োজিন ছিল ৩৫ রান। শরিফুলের করা ১৮তম ওভার থেকে ১৪ রান তোলেন আয়ান আফজাল খান ও জুনায়েদ সিদ্দিক। শরিফুলকে ২টি চার মারেন ১৬ বছর বয়সী অভিষিক্ত আয়ান। ১৯তম ওভার থেকে ১০ রান তুললে আরব আমিরাতের প্রয়োজন দাঁড়ায় শেষ ৬ বলে ১১ রান। কিন্তু কাজটি শেষ করতে পারেনি তাদের শেষ জুটি।
মাত্র ১৬ বছর বয়সী আয়ান প্রচন্ড চাপের মাঝেও ১৭ বলে ৩টি চারে ২৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৫, চিরাগ সুরি ২৪ বলে ৭টি চারে ৩৯, আরিয়ান লাকড়া ১৯, ভ্রিত্য আরভিন্দ ১৬, কার্তিক মিয়াপ্পান ১২ ও জুনায়েদ সিদ্দিক ১১ রান করেন। ৩ ওভারে ১৭ রানে ৩ উইকেট নেন মিরাজ। ৩.৪ ওভারে ২১ রানে শরিফুলের শিকারও ৩ উইকেট। ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া মুস্তাফিজ পান ২ উইকেট। বাকি দুই উইকেট আসে রান আউট থেকে।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয় চরম অগোছালোভাবে। তিন বলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি সাব্বির রহমান, হাফ শটে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। লিটন কুমার দাসের দারুণ শুরুর অপমৃত্যু হয় একই ধরনের শটে। মেহেদী হাসান মিরাজ বল তোলেন আকাশে। যেন প্রতিপক্ষকে ক্যাচ অনুশীলন করতে নেমেছিলেন সবাই।
ইয়াসির আলী রাব্বির আউটের ধরন ছিল আরও হতাশার। ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ তবু লড়াইয়ের পূঁজি পায়। টি-টোয়েন্টিতে ত্রাতা হয়ে ওঠা আফিফ ব্যাট হাতে পথ দেখান, অবদান রাখেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও। অবশ্য আফিফও ক্যাচ তুলে বেঁচে চান একবার।
বাংলাদেশ পাওয়ার প্লে ৬ ওভার থেকে ৪২ রান তোলে, উইকেট হারায় ৪টি। ইনিংসে উদ্বোধন করতে নেমে মিরাজ নিজের কাজটা ঠিকভাবে শুরু করলেও সাব্বির ব্যর্থ হন। দ্বিতীয় ওভারে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ৩ বলেও কোনো রান করতে না পারা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
লিটন সাবলীল শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে বল তোলেন তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। জুনায়েদ সিদ্দিকের তালুবন্দী হওয়ার আগে ৮ বলে ৩টি চারে ১৩ রান করেন লিটন।
দলীয় ৩৫ রানে বিপদ বাড়ে মিরাজের বিদায়ে। ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে যায়, ১৪ বলে ২টি চারে ১২ রান করে ফেরেন তিনি। ইয়াসির খুবই দৃষ্টিকটুভাবে আউট হন। ফুটওয়ার্কের দীনতায় বোল্ড হয়ে যান ৭ বলে ৪ রান করা মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজলেও আফিফ ছিলেন অবিচল। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও হতাশ করে ফেরেন। ৮ বলে ৩ রান করে স্টাম্পিং হন তিনি। অধিনায়ক হোসানকে নিয়ে লড়াই শুরু হয় আফিফের। উইকেট হারানোর চাপ কাটিয়ে এই জুটি পাল্লা দিয়েই রান তোলা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন তারা।
৫৪ বলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি (ষষ্ঠ উইকেটে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা জুটি) গড়ার পথে ৩৭ বলে ৫০ পূর্ণ করেন আফিফ। এরপর আরও হাত খুলে ব্যাটিং শুরু করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। চোখ ধাঁধানো সব শটে ৫৫ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৭ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন আফিফ। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
শেষ বলে ছক্কা মেরে ইনিংস শেষ করা বাংলাদেশ অধিনায়ক সোহান ২৫ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় হার না মানা ৩৫ রান করেন। আমিরাতের কার্তি মিয়াপ্পান সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সাবির আলী, আয়ান আফজাল খান ও জাওয়ার ফরিদ।