Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা
tbs
FRIDAY, AUGUST 12, 2022
FRIDAY, AUGUST 12, 2022
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
সাইকেলে চড়ে সমাজতন্ত্র

ইজেল

এম এ মোমেন
04 June, 2022, 06:30 pm
Last modified: 04 June, 2022, 06:31 pm

Related News

  • তার কারবার জেব্রা, জিরাফ, সিংহ, গণ্ডার, জলহস্তী নিয়ে...
  • দারোগা ও ‘রায় মহাশয়’
  • বাঁকাউল্লার হাতকাটা হরিশ
  • টাক পড়ার দিন কি শেষ?
  • ‘ইস্তাম্বুলে’ই মিলবে অথেনটিক টার্কিশ খাবার!

সাইকেলে চড়ে সমাজতন্ত্র

চিলিতে সালভাদর আয়েন্দের কথাটি বহুল প্রচলিত—‘কেবল সাইকেলে চড়েই সমাজতন্ত্র আসতে পারে।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নৌকা আর বাইসাইকেলই ছিল আমাদের যুদ্ধযান। সেই ১৮১৫ সালেই বাইসাইকেল আরোহী নারীদের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নিউ ওমেন’। সাইকেল প্রকৃতপক্ষেই হয়ে উঠেছিল সমাজতন্ত্র আনার, অর্থাৎ বৈষম্য ঘোচানোর বাহন।
এম এ মোমেন
04 June, 2022, 06:30 pm
Last modified: 04 June, 2022, 06:31 pm

হাজি চানের কথা মনে পড়ে?

বাংলাদেশের পপগুরু আজম খানের প্রথম যুগের হিট গান, যে গানে চানখারপুলের হাজি চানের কথা বলেছেন, সেই হাজি চানকে মনে পড়ে? দুটো দুষ্ট বেয়াড়া ছেলের বাবা।

আলাল ও দুলাল, আলাল ও দুলাল

তাদের বাবা হাজি চান

চানখা পুলে প্যাডেল মেরে পৌঁছে বাড়ি

আলাল ও দুলাল

আলাল যদি ডাইনে যায়

দুলাল যায় বায়ে

তাদের বাবা সারা দিন খুঁজে খুঁজে মরে।

সাইকেলটা ছিল বলেই হাজি চান বাড়ি আসতে পেরেছেন এবং হন্যে হয়ে ছেলে দুটোকে খুঁজে বেড়িয়েছেন। সত্তরের দশকের শেষার্ধে আজম খানের এই গান ছিল তরুণ প্রজন্মের মুখে মুখে।

সমাজতন্ত্রের বাহন

সালভাদর আয়েন্দের চিলিতে বহুল প্রচলিত উদ্ধৃতিটি ছিল 'কেবল সাইকেলে চড়েই আসতে পারে সমাজতন্ত্র'। কলম্বিয়ার বোগোটার মেয়র নিশ্চিত করেছেন তার শহরের কেন্দ্রে থাকবে কেবলই সাইকেল, আর সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সেটাই হবে প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু সাইকেলের দুর্ভাগ্য ১৯৩০-এর দশকে সাইকেলের স্বর্ণযুগের পরপরই এসে যায় সাইকেলের দুর্ভোগকাল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর অটোমোবাইল বিপ্লব দুই চাকার সাইকেলকে ঠেলে একেবারে প্রান্ত পাঠিয়ে দেয়।

সাইকেল ও সমাজতন্ত্রের উত্থান (এবং পতন) নিয়ে পৃথক অভিসন্দর্ভ রচিত হতে পারে। বলশেভিক বিপ্লবের যে ঢেউ বাংলায় লেগেছিল, সমাজতন্ত্র কায়েম করতে বাংলার মেধাবী বিপ্লবীরাও কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে প্রান্ত থেকে প্রান্তে মানুষকে জাগাতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। শেষটা আমরা জানি। তাই এই নিবন্ধটিতে সাইকেল নিয়ে বরং আগ্রহী পাঠকের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ইতিহাস ও তথ্য উপস্থাপন করি।

নারীমুক্তির বাহন বাইসাইকেল: ফ্রিডম মেশিন

১৮৯৬ সালে সুসান বি অ্যান্থনি বিবৃতি দিয়েছেন: বাইসাইকেল পৃথিবীর নারীমুক্তিতে যে অবদান রেখেছে, এর সমকক্ষ কোনো কিছু নেই। যখনই আমি চাকার ওপর কোনো নারীকে দেখি, প্রতিবার আমি দাঁড়িয়ে যাই এবং আনন্দ প্রকাশ করি।

১৯৮১ সালে ভারত যখন মহাকাশে উপগ্রহ নিক্ষেপ করল। উপগ্রহটি পরিবহন করে ক্ষেপণস্থলে নিয়ে এল গরুর গাড়ি আর রকেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আনা হলো সাইকেলের পেছনে চাপিয়ে। আমাদের অনেকেরই অজানা উড়োজাহাজ আবিষ্কার ভ্রাতৃদ্বয় উইলবার ও অরভিল রাইট ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকে সাইকেল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তাদের কোম্পানির নাম ছিল রাইট সাইকেল কোম্পানি।

এলিজাবেথ স্ট্যান্টন লিখেছেন, বাইসাইকেল হচ্ছে সেই হাতিয়ার, যা নারীকে শক্তি সঞ্চয় করতে প্রণোদিত করেছে এবং সমাজে তাদের ভূমিকা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এর সঙ্গে যোগ করা যায় স্কুটিকেও, অনেক নারীকে ঢাকার রাস্তায় সগৌরবে স্কুটি চালাতে দেখা যায়। সাইকেলকে এ কারণেই সুসান বি অ্যান্থনি বলেছেন নারীর ফ্রিডম মেশিন।
ধনীর দুলালী শখের বসে সাইকেল চালাচ্ছে এ দৃশ্য স্বাধীনতা পূর্ব ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে দেখা গেছে। এর সাথে নারীমুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সিলেট, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, রংপুর এবং আরও অন্যান্য জেলায় যখন দরিদ্র মেয়েটিকে দেখা গেল ভারসাম্য রক্ষা করে দুই চাকার বাহনটি নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, দূরদর্শী মানুষেরা বুঝতে পেরেছেন এটাই নারীমুক্তির পথ। বাংলাদেশে গ্রামীণ নারীজীবনে যে পরিবর্তন এসেছে, তা অবশ্যই বৈপ্লবিক, সেখানে সরকারের ভূমিকা সামান্যই, পথ দেখিয়েছেন ফজলে হাসান আবেদ এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মতো কজন বিশ্ব-নাগরিক।

নারীর বাইসাইকেল ব্যবহার আরও অনেক বেড়ে যাবে। ২০২২ থেকে ২০৩০ পর্যন্ত বাইসাইকেল উৎপাদন ও ব্যবহারে বার্ষিক যে ৮.২ ভাগ প্রবৃদ্ধি হিসাব করা হয়েছে, তার বৃহদাংশই হবে নারীর ব্যবহার্য।

সাইকেল আরোহী নারীই 'নিউ ওম্যান'

১০৭ বছর আগে ১৮১৫ সালেই ঘোষিত হয়েছে বাইসাইকেল আরোহী নারীই হচ্ছে 'নিউ ওম্যান'। ব্রিটেনের অভিজাত শ্রেণির নারীর পাশাপাশি বাইসাইকেলের পেডালে যখন শ্রমিক ও কর্মজীবী নারীর পায়ের চাপ পড়ল, পৃথিবী টের পেল পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ গতিহীন ছিল, বাইসাইকেল তাদের গতি এনে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপনে, পোস্টারে সাইকেল আরোহী পুরুষকে হটিয়ে সে জায়গাটা দখল করে নিল নারী।

ব্রিটেনের অভিজাত শ্রেণির নারীর পাশাপাশি বাইসাইকেলের পেডালে যখন শ্রমিক ও কর্মজীবী নারীর পায়ের চাপ পড়ল, পৃথিবী টের পেল পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ গতিহীন ছিল, বাইসাইকেল তাদের গতি এনে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপনে, পোস্টারে সাইকেল আরোহী পুরুষকে হটিয়ে সে জায়গাটা দখল করে নিল নারী।

গোড়ালির ওপরে উঠা স্কার্ট পরা সেই নিউ ওম্যানকে রক্ষাশীল সমাজ বলতে শুরু করল লুজ ওম্যান, সোজাকথা চরিত্রহীন নারী। কিন্তু নারী থেমে থাকেনি।  তারপর অনেক লড়াই, এখনো চলছে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সাম্যের লড়াই। এখনো নারীমুক্তির হাতিয়ার বাইসাইকেল।

সাইক্লিষ্ট যদি তেল খেতে পারতেন

সাইকেল সভ্যতাকে গতিময় এবং আরও বেশি উৎপাদনমুখী করেছে। একবাক্যে স্বীকার করা হয় মানব ইতিহাসেই সবচেয়ে দক্ষ আবিষ্কার হচ্ছে বাইসাইকেল। এক গ্যালন গ্যাসোলিনে একটি গাড়ি ক মাইল যায়? এক গ্যালন অর্থাৎ প্রায় চার লিটার গ্যাসোলিনে ৩৯,০০০ ক্যালরি শক্তি নিহিত। একজন সাইক্লিষ্ট যদি তেল খেয়ে তাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারতেন, তাহলে এক গ্যালন গ্যাসোলিনে ৯১২ মাইল পথ সাইকেল চালিয়ে চলে যেতে পারতেন। ৯১২ মাইল পথ মানে লিটারে প্রায় ৩৬০ মাইল।

সাইকেলই স্ট্রিট কারেন্সি

মুদ্রার এই নামটির সাথে বাংলাদেশ তেমন পরিচিত নয়। যদিও এ ধরনের মুদ্রা এখানেও প্রচলিত।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর পুলিশ বিভাগ মনে করে সেখানকার সাইকেল চোরদের ৯০ ভাগই হচ্ছে মাদকাসক্ত। তাদের তুলে নেওয়া সাইকেলটি একটি বিনিময়ের মাধ্যম। চুরি করে আনা সাইকেলটি অল্প কিছু নগদে কিংবা অল্প কিছু মাদকের বিনিময়ে তাৎক্ষণিকভাবেই হস্তান্তর করা যায়। ঢাকা শহরেই চোরাই সাইকেল মোবাইল ফোনসহ বহু ধরনের স্ট্রিট কারেন্সির ব্যবহার গুলিস্তান এলাকাতেই দৃশ্যমান।

সাইকেলে দারিদ্র্যরেখা পারাপার

বিংশ শতকের দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পগুলো ব্যর্থতা অনেক। কিন্তু সাইকেলনির্ভর প্রকল্পে দেখা গেছে শেষ পর্যন্ত সাইকেল দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রমান হিসেবে উগান্ডা, তানজানিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের কোনো কোনো রাষ্ট্রের প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে একটি সাইকেল পরিবারের আয় গড়ে ৩৫ ভাগ বাড়িয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের ব্র্যাকের সাইকেল বালিকা ও সাইকেল নারীরা শুধু আয়ই বৃদ্ধি করেনি, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারে নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতাও তাদের কাছে চলে এসেছে। ১৯৯০-এর দশকের কিছু প্রকল্প প্রমাণ করছে সাইকেল ও রাস্তায় বিনিয়োগ অন্য বিনিয়োগের চেয়ে ৩ থেকে ১০ গুণ বেশি ফলপ্রসু।

পাকা রাস্তা সাইকেলের অবদান 

কাঁচা রাস্তা, আধা কাঁচা রাস্তা, 'হেরিং বোন বন্ড' রাস্তা, পাকা রাস্তা—সময়ের সাথে রাস্তার অনেক উত্তরণ ঘটেছে। পৃথিবীজুড়েই মূল রাস্তা থেকে সাইকেল বহিষ্কৃত হলেও (সভ্যদেশে সাইকেল বাইলেন আছে, বাংলাদেশে বাইলেন হওয়ার জায়গাটা হকারের দখলে, সাইকেল এবং এমনকি মোটরসাইকেলই ফুটপাতে উঠে এসেছে।) পাকা রাস্তার সূচনা মূলত বাইসাইকেলের জন্য। এবড়োখেবড়ো রাস্তায় গাড়ি ভালোই চলত, কিন্তু সাইকেলের জন্য তা ছিল দুরূহ। মূলত সাইকেল আরোহীদের চাপে রাস্তা পাকা করার দাবি জোরদার হয়। পাকা রাস্তা এখন উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত আর দেশের কাঁচা ও পাকা রাস্তার অনুপাতকে দেখা হয় উন্নয়ন ও সভ্যতার সূচক হিসেবে। ১৮৯০ দশকে সাইকেল নির্মাতারাই আমেরিকায় পাকা রাস্তা বাড়ানোর প্রধান লবিং গ্রুপ হিসেবে কাজ করেন। তারাই ছিলেন অন্যতম আয়কর দাতা।

মহাযুদ্ধকালে সাইকেল

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নৌকা আর বাইসাইকেলই ছিল আমাদের যুদ্ধযান। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ও সৈন্যরা সাইকেল ব্যবহার করেছে। জাপান যখন মালয়েশিয়া অবরোধ করে, তাদের সাইকেল আরোহী সৈন্যরাই উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নেয়।

পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ২ বিলিয়ন বাইসাইকেল রাস্তায় নামে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৫ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সাইকেল চালাতে জানে। চীনের ৩৭.২ ভাগ জনগোষ্ঠী সাইকেল চালায়। এই হার সুইজারল্যান্ডে ৪৮, জাপানে ৫৭ এবং ফিনল্যান্ডে ৬০ ভাগ। মাথাপিছু সাইকেলের প্রশ্ন যদি আসে, তাহলে শীর্ষ স্থানে নেদারল্যান্ডস। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের অন্য নাম সিটি অব সাইক্লিস্টস। অনেক বছর ধরে পৃথিবীতে গড়ে ১০০ মিলিয়ন সাইকেল উৎপাদিত হচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো শহরের জন্য দ্রুতগামী, নমনীয় ও নির্ভরযোগ্য বাহন হচ্ছে সাইকেল।

প্যারিস নাৎসিদের হাতে অবরুদ্ধ হবার ঠিক পূর্বক্ষণে হ্যানস ও মার্গারেট রে নামের দুজন ইহুদি সাইকেলে চেপে প্যারিস থেকে পালালেন। তাদের সাথে লুকিয়ে আনা একটি কি দুটি সম্পদ, তার একটি হচ্ছে 'কিওরিয়াস জর্জ' সিরিজের প্রথম বইটির পাণ্ডুলিপি। এটি হ্যানস রে এবং মার্গারেট রের লেখা ও আঁকা শিশুতোষ বই। একটি এতিম শিল্পাঞ্জির কাহিনি। ১৯৪৯ সালে ২ ডলার দামের বইটির প্রথম সংস্করণ ৭৫০০ কপি বাজারে এলে দ্রুত ফুরিয়ে গেল। ২০২১ পর্যন্ত এই বইটির আড়াই কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। যে সাইকেল দুটিতে চড়ে দুজন নিজেদের পাণ্ডুলিপি নিয়ে প্যারিস ছেড়েছিলেন, সেই সাইকেলও হ্যানস রের নিজের হাতে বানানো।

১৯৮১ সালে ভারত যখন মহাকাশে উপগ্রহ নিক্ষেপ করল। উপগ্রহটি পরিবহন করে ক্ষেপণস্থলে নিয়ে এল গরুর গাড়ি আর রকেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ আনা হলো সাইকেলের পেছনে চাপিয়ে। আমাদের অনেকেরই অজানা উড়োজাহাজ আবিষ্কার ভ্রাতৃদ্বয় উইলবার ও অরভিল রাইট ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকে সাইকেল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তাদের কোম্পানির নাম ছিল রাইট সাইকেল কোম্পানি।

সাইকেলের ঘুরন্ত চাকায় ঘোড়ার মুক্তি

আধুনিক ইউরোপেরও ঘোড়ানির্ভরতা ছিল ব্যাপক। ঘোড়া হাঁকিয়ে কিংবা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে রেলস্টেশনে আসতে হতো। স্টেশনের বাইরে ঘোড়ার বিশাল হাট। এদিকে সড়কে ঘোড়ার মৃত্যু পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ সময় সাইকেলের অভ্যুদয় আশার সঞ্চার করে। ইউরোপের প্রায় সকল রেলস্টেশনের বাইরে সাইকেল পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়—পার্কিং ফ্রি। আমস্টারডাম স্টেশন পার্কিংয়ের ভেতর সাইকেল রিপেয়ার শপও বসিয়ে দেয়। নাগরিক জীবনে সাইকেল যখন মিশে যায় ঘোড়ার জন্য স্বস্তি আসে। ঘুরন্ত চাকা ঘোড়ার মুক্তি এনে দিয়েছে।

৫০০ মিলিয়ন গ্যালন পেট্রোলিয়াম সাশ্রয়

মানুষের সচেতনতা বাড়লে, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে কেবল সাইকেল চালিয়েই প্রায় ১ বিলিয়ন গ্যালন পেট্রোলিয়াম সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। যুগপৎ চালকের সুস্বাস্থ্য ও আর্থিক সাশ্রয় নিশ্চিত করার মতো সাইকেলের বিকল্প কোনো বাহন নেই। সাইকেলের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হচ্ছে নিউম্যাটিক টায়ার; ১৮৮৭ সালে জন ডানলপ এই টায়ার আবিষ্কার করেন।

কোভিড সাইকেলের জন্য আশীর্বাদ

২০২০-২০২১ কোভিডবর্ষে ইতালি ও ব্রিটেন ভোক্তাপ্রান্তে বড় ভর্তুকি প্রদান করে তাদের দিয়ে সাইকেল কিনিয়েছে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য যেহেতু গণপরিবহণ ও অন্যান্য গাড়িতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়, সাইকেলই কেবল সে নিশ্চয়তা দিতে পারে, সুতরাং সাইকেলই স্বাস্থ্যসম্মত ও তা সংক্রমণ-নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। 

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ও সৈন্যরা সাইকেল ব্যবহার করেছে। জাপান যখন মালয়েশিয়া অবরোধ করে, তাদের সাইকেল আরোহী সৈন্যরাই উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে নেয়।

একপক্ষ বলেছে কোভিড যদি মানুষ মেরে পৃথিবী সাফ করে দেয়, তাহলে বিএমডব্লিউ গাড়ি থাকলেও যা, দুই চাকার সাদামাটা সাইকেলও তাই। আর লকডাউন লাগাতার হলে সেখানে ঘর থেকেই বের হওয়া যাচ্ছে না, সাইকেল কী হবে। অন্যদিকে পেট্রোলিয়ামের মূল্যের মহাকাব্যিক পতন পৃথিবীতে এক অবিশ্বাস্য পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। পরিবেশবাদীরা কার্বন নিঃসরণ কমাতে গাড়ি ক্রয় ও ব্যবহারে রেশনিংয়ের ওপর জোর দেন। এর মধ্যেই উন্নত পৃথিবীর কিছুসংখ্যক সিটি সেন্টারে অটোমোবাইল গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে। ফলে বাইসাইকেল ও টেনডেম সাইকেলের (দুজনের ব্যবহার্য) চাহিদা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে স্বল্প দূরত্বের বাণিজ্যিক পরিবহনের জন্য কার্গো সাইকেল খুব জনপ্রিয় এবং আর্থিক দিক দিয়ে সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে। অধিকন্তু কার্গো সাইকেল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। সব মিলিয়ে কোভিড-উত্তর পৃথিবীতে সাইকেলের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। 

সাইকেলবান্ধব নগর: বাইক ওনলি লেন

সাইকেলবান্ধব নগরের শীর্ষে কোপেনহেগেন। সাইকেল প্রশ্নে কোপেনহেগেনবাসী এতটাই সংবেদনশীল যে তারা রাজনৈতিক দলের নির্বাচন মেনিফেস্টোতে সাইকেল নিয়ে দলের প্রতিশ্রুতি কী, তা পর্যালোচনা করে। সেখানে একটি প্রো-কার প্ল্যাটফর্মও আছে, কিন্তু তাদের পাত্তা নেই। দ্বিতীয় স্থানে আমস্টারডাম, সেখানে সাইকেল রুট রয়াল রুট হিসেবে পরিচিত ও সমাদৃত। তৃতীয় অবস্থানে নেদারল্যান্ডসের অপর একটি শহর উটরেখট, এই শহরের সাইক্লিং অবকাঠামো সম্ভবত পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো। চতুর্থ স্থানে অ্যান্টওয়েরপ, এখানে নারী সাইক্লিস্ট পুরুষের চেয়ে বেশি। পঞ্চম স্থানে ফ্রান্সের প্রিমিয়ার বাইসাইকেল সিটি স্ট্রাসবর্গ: ষষ্ঠ—ফ্রান্সের বর্দো; সপ্তম—নরওয়ের অসলো; অষ্টম—ফ্রান্সের প্যারিস; নবম—অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা; দশম—ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি; একাদশ—জার্মানির ব্রেমেন; দ্বাদশ—কলম্বিয়ার বোগোটা; ত্রয়োদশ—স্পেনের বার্সেলোনা; চর্তুদশ—স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলানা; পঞ্চদশ—জার্মানির বার্লিন; ষোড়শ—জাপানের টোকিও; সপ্তদশ—তাইওয়ানের তাইপেই; অষ্টাদশ—কানাডার ভ্যাঙ্কুবার; অষ্টাদশ (দ্বিতীয়)—কানাডার মন্ট্রিয়েল; বিংশতম—জার্মানির হামবুর্গ।

২০২১ সালের নভেম্বরে আবুধাবিকে এশিয়ার বাইক সিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে 'নাইন মিলিয়ন বাইসাইকেল শহর' (গানের পঙ্ক্তি) বেইজিংকে সংখ্যায় ডিঙিয়ে যাবার সুযোগ কম। সাইকেলের জন্য দ্বিতীয় উত্তম নগরী জাপানের কিয়োটো; তারপর কোরিয়ার জেজু, এই দ্বীপে সাইকেল চালনার জন্য মোট ১৮২টি ট্র্যাক রয়েছে। এখানকার ১২ নম্বর রুট প্রান্ত ছুয়ে সমস্ত দ্বীপকে ঘিরে আছে। তাইওয়ানের কাউসিয়াং শহরে পঞ্চাশটি সাইকেল কিয়োস্ক রয়েছে। এখান থেকে সস্তায় সাইকেল ভাড়া নিয়ে শহর ঘুরে ফিরে যেকোনো কিয়োস্কে জমা দিয়ে বাড়ি ফেরা যায়। সিঙ্গাপুরের সাতটি শহরে সাইকেলের জন্য নিবেদিত লেন রয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষা প্রতিশ্রুতির আওতায় সরকার সাইকেল আরোহীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হয়েছে।

সাইকেল চুরি

পৃথিবীর অনেক দেশে সাইকেল চুরি হয়। এখন পর্যন্ত যত সাইকেল চোর ধরা পড়েছে, চুরির সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছেন স্লোভেনিয়া জন্মগ্রহণ করা কানাডাবাসী আইগর কেঞ্চ। তার চুরি করা সাইকেলের সংখ্যা কত, তিনিও নিশ্চিত নন। তবে পুলিশ এ পর্যন্ত ৩০০০-এর বেশি সাইকেল তার বিভিন্ন ডেরায় হানা দিয়ে উদ্ধার করেছে। তবে পুলিশ মনে করে, এর সবগুলোই তার চুরি করা নয়। এখন তাকে ২৬৮৫টি সাইকেল চুরির কৃতিত্ব দেওয়া হয়। আইগর কেঞ্চ একজীবনে পুলিশ সদস্য ছিলেন। তিনি ক্লাসিক্যাল সংগীতের ভক্ত।

বৈশ্বিক সাইকেল বাজার

পৃথিবীতে প্রতিদিন গড়ে ২ বিলিয়ন বাইসাইকেল রাস্তায় নামে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ৫ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সাইকেল চালাতে জানে। চীনের ৩৭.২ ভাগ জনগোষ্ঠী সাইকেল চালায়। এই হার সুইজারল্যান্ডে ৪৮, জাপানে ৫৭ এবং ফিনল্যান্ডে ৬০ ভাগ। মাথাপিছু সাইকেলের প্রশ্ন যদি আসে, তাহলে শীর্ষ স্থানে নেদারল্যান্ডস। ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের অন্য নাম সিটি অব সাইক্লিস্টস। অনেক বছর ধরে পৃথিবীতে গড়ে ১০০ মিলিয়ন সাইকেল উৎপাদিত হচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো শহরের জন্য দ্রুতগামী, নমনীয় ও নির্ভরযোগ্য বাহন হচ্ছে সাইকেল। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরটিই সাইকেলের জন্য পরিকল্পিতভাবে নির্মিত, এখানে জনসংখ্যার চেয়ে সাইকেল বেশি। আমস্টারডামের খালেবিলে সাইকেল পাওয়া যায়। এখানকার খাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১২ থেকে ১৫ হাজার সাইকেল উত্তোলন করা হয়। এর একাংশ দুর্ঘটনাজনিত, একাংশ  চোরাই।

আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমাংশে বাইসাইকেল ট্যুরিজম বছরে ৪৩ মিলিয়ন ডলারের জোগান দেয়, এটি একটি উদাহরণ। মার্কিন অর্থনীতিতে সাইকেল এবং সাইকেলের সাথে জড়িত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে ১৩৩ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়, কর হিসেবে রাষ্ট্রের হাতে আসে ১৮ বিলিয়ন ডলার। সাইকেল নগরের বাসযোগ্যতা, জনস্বাস্থ্য, বাতাসের গুণাগুণ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা করতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে।

সাইকেল শিল্পের বিস্তার ৫টি প্রধান খাতে: ক. বাইসাইকেল বিক্রি ও মেরামত খ. বাইসাইকেল উৎপাদন  ও পাইকারি সরবরাহ; গ. বাইসাইকেল অবকাঠামো ঘ. বাইসাইকেল পর্যটন ঙ. বাইসাইকেল সার্ভিসেস।

ব্রিটেনের আর্থিক অবস্থা খারাপ; মুক্তির পরামর্শ: পরিবহন খাতে সাইকেল ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ লন্ডন শহরে সাইকেল ব্যবহার যদি তিন গুণ করা যায়, তাহলে লন্ডনের বাসযোগ্যতা বাড়বে, মানুষের চিকিৎসাব্যয় কমবে; ৬.৫ বিলিয়ন ডলার অর্থনীতিতে যোগ হবে। উন্নয়নশীল দেশে লোক দেখানো গাড়ির মালিকানা গুরুত্বপূর্ণ হলেও উন্নত দেশে সাইকেলনির্ভরতা বাড়ছে। কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং জ¦ালানী সাশ্রয় থেকে ২৪ ট্রিলিয়ন ডলার রক্ষা করা সম্ভব হবে।

ঊনবিংশ শতকের শেষভাগে যুক্তরাষ্ট্রে যে বিজ্ঞাপনের বাজার ছিল, তার দশ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করতেন সাইকেল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা।

২০২১ সালে করোনাভাইরাসের লকডাউনের বছরও বিশ্ব বাইসাইকেল বাজারের আকার ছিল ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালে তা ১২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

পাদটীকা

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, অবস্থাপন্ন শ্বশুরের কাছ থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ যৌতুকটি ছিল রেলি বাইসাইকেল। রেলির মর্যাদা একালের বিএমডব্লিউ কিংবা লেক্সাসের চেয়ে কম কিছু ছিল না।

পঞ্চাশের দশকের বাংলা সিনেমার নায়কের কাছে দুই চাকার সাইকেলটিই ছিল পঙ্খীরাজ। ষাটের দশকে এসে সাইকেলের সিটের সামনের হরাইজন্টাল ক্রসবারে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার্থী নায়িকাকে বসিয়ে গুরুজনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক চক্কর ঘুরিয়ে আনার যে আনন্দ, তার কোনো তুলনা নেই।

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / সাইকেল / বাইসাইকেল / সাইকেলের ইতিহাস / সমাজতন্ত্র / ফিচার

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • তদন্ত শেষে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিসিবি
  • ৩০ বছর ফেরার ছিলেন যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’, অভিনয় করেছেন ২৮টি চলচ্চিত্রে
  • বিপিসি লোকসানে, সত্যিই?
  • সিঙ্গাপুরের আদলে ‘নাইট সাফারি পার্ক’ হচ্ছে চট্টগ্রামে
  • বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর মেশিনারি পণ্যের প্রথম চালান মোংলা বন্দরে
  • অর্থাভাব, মেয়েকে একা বড় করা! তবু ভিভের প্রতি ক্ষোভ নেই নীনার    

Related News

  • তার কারবার জেব্রা, জিরাফ, সিংহ, গণ্ডার, জলহস্তী নিয়ে...
  • দারোগা ও ‘রায় মহাশয়’
  • বাঁকাউল্লার হাতকাটা হরিশ
  • টাক পড়ার দিন কি শেষ?
  • ‘ইস্তাম্বুলে’ই মিলবে অথেনটিক টার্কিশ খাবার!

Most Read

1
খেলা

তদন্ত শেষে সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিসিবি

2
ফিচার

৩০ বছর ফেরার ছিলেন যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’, অভিনয় করেছেন ২৮টি চলচ্চিত্রে

3
অর্থনীতি

বিপিসি লোকসানে, সত্যিই?

4
বাংলাদেশ

সিঙ্গাপুরের আদলে ‘নাইট সাফারি পার্ক’ হচ্ছে চট্টগ্রামে

5
বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর মেশিনারি পণ্যের প্রথম চালান মোংলা বন্দরে

6
বিনোদন

অর্থাভাব, মেয়েকে একা বড় করা! তবু ভিভের প্রতি ক্ষোভ নেই নীনার    

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab