গাড়ির মূল্য ২ মিলিয়ন ডলার, নেই কোনো ছাদ!

ধরুন ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেন্টলি'র নতুন উদ্ভাবন, 'ব্যাকালার' গাড়িতে চড়ে একটু ঘুরে আসার জন্য যখন আপনি তৈরি হচ্ছিলেন, বাইরে তখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। অন্য কোনো সময়ে হলে, তাতে কিছু যেত আসতো না। কারণ সেদিন এমন কোনো বৃষ্টি ছিলনা যে ছাতা মেলে ধরতে হবে। কিন্তু মুশকিলটা হলো, বেন্টলি ব্যাকালারের কোনো ছাদ নেই!
এবং ব্যাকালার কোনো কনভার্টিবল গাড়ি নয়। অর্থাৎ, এই গাড়িতে চড়লে মাথার উপর সত্যিই কোনো আবরণ থাকবে না, কোনো ফোল্ডিং ছাদও থাকবে না।
বৃষ্টির দিনে যদি ব্যাকালারের মালিকেরা এই গাড়ি চালাতে না পারেন, তাতেও বড় কোনো অসুবিধা নেই। আপনি ধরেই নিন, যে ব্যক্তির ২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ব্যাকালার কেনার সামর্থ্য আছে; তার নিশ্চয়ই আরো দু-চারখানা গাড়িও আছে!
বেন্টলি ব্যাকালার গাড়িতে ছাদ না থাকায়, এর নকশাকারদের ফোল্ডিং ছাদ কোথায় গুটিয়ে রাখা হবে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি।
বেন্টলি'র মুখপাত্র টিম হ্যানিগ বলেন, "আপনার গাড়িতে যখন কোনো ছাদ থাকবে না, তখন বৃষ্টির পানি গড়িয়ে বাইরে চলে যাবে। এই গাড়িটা আসলে সেভাবেই নকশা করা হয়েছে। আমরা চেয়েছি, ব্যাকালারকে অদ্বিতীয় এক সৌন্দর্য্যে রূপ দিতে।"
বেন্টলি ব্যাকালার তৈরিও হবে মাত্র কয়েক ডজন। তাই এটি অবশ্যই ব্যক্তিগত মালিকানায় রাখার মতো একটি গাড়ি। তবে অন্যান্য এক্সক্লুসিভ গাড়ির চাইতে এর পার্থক্য হলো, এটি রাস্তায় চালানো বৈধ।
বেন্টলি ব্যাকালারে রয়েছে একটি টার্বোচার্জড ৬৫০ হর্সপাওয়ারের ১২-সিলিন্ডার বিশিষ্ট ইঞ্জিন। তবে ব্যাকালারকে আসলে হাই-পারফরমেন্স স্পোর্টস কার হিসেবে তৈরি করা হয়নি। কেউ যদি সে ধরনের গাড়ি চান, তাহলে বেন্টলি'র সিস্টার-ব্র্যান্ড, ল্যাম্বরগিনি থেকে একটি গাড়ি বেছে নিতে পারেন। দুটি প্রতিষ্ঠানই ভক্সওয়াগন গ্রুপের অধীনে।

ব্যাকালার এমনভাবে তৈরি যে যাত্রাপথে এটি একেবারে নিখুঁতভাবে চলবে। এর আরামদায়ক আসন এবং ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা আপনাকে বিলাসী অনুভূতি দিবে। তাই যে কেউ চাইলে এই গাড়িটি প্রতিদিনই ব্যবহার করতে পারবেন।
বেন্টলি ব্যাকালার নির্মাণের ক্ষেত্রে যে পারফরমেন্সকে একেবারে অগ্রাহ্য করা হয়েছে, তা নয়। যদিও গাড়িটির বাহ্যিক রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন, কিন্তু ব্যাকালারের মূল যন্ত্রাংশগুলো 'বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটি'র আদলে তৈরি। বিশেষত, হাই-পারফরমেন্স জিটিসি স্পিড মডেল ব্যাকালারেও ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু ব্যাকালারের ওজন অন্যগুলোর চাইতে প্রায় দুইশত পাউন্ড হালকা। কারণ গাড়ির মূল বডির অনেকটাই তৈরি হয়েছে অত্যন্ত দামী কার্বন ফাইবার দিয়ে। ছাদ এবং কোনো ব্যাকসিট না থাকা এর ওজন কমাতে সাহায্য করেছে। আর এই সবকিছু মিলে গাড়িটির ভরকেন্দ্রও কমে গেছে, ফলে আঁকাবাঁকা স্থানে এটি আরও স্বচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে। তবে ৫৩০০ পাউন্ড ওজনের ব্যাকালার কিন্তু অতটা নমনীয়ও নয়। কারণ এর ওজন একটি ফুল-সাইজ মার্সিডিজ লাক্সারি সেডানের চাইতেও বেশি।
ব্যাকালারের অন্দরসজ্জা এক কথায় অদ্বিতীয়। ড্যাশবোর্ডের অংশটুকু তৈরি হয়েছে ৫০০০ বছর পুরনো এক গাছের কাঠ থেকে, যা এতদিন যাবত যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার ফলে এটি কালচে রঙ ধারণ করেছে। ড্যাশবোর্ডের মাঝে রাখা অ্যানালগ ঘড়িটির চোখ জুড়ানো হালকা নীল রঙ আপনাকে মেক্সিকোর ব্যাকালার হ্রদের নীল পানির কথা মনে করিয়ে দিবে!
বেন্টলি'র অন্যান্য মডেলসমূহের মতো ব্যাকালারেও আছে একটি ত্রিমুখী রোটেটিং প্যানেল। গিয়ার সিলেক্টরের কাছে রয়েছে সুইচের প্যানেল, যা বেন্টলি কন্টিনেন্টাল জিটি'র মধ্যেও দেখা যায়। এই গাড়িটির মধ্যে কোনো ব্যাকআপ ক্যামেরা নেই।
তবে ব্যাকালার বাইরে থেকে দেখতে অতটা দৃষ্টিনন্দন নয়। অনেকেই হয়তো এটিকে স্রেফ 'একটা সুন্দর বেন্টলি' বলেই আখ্যা দিবেন। কিন্তু একটু সময় নিয়ে চোখ বুলালেই বুঝবেন, ব্যাকালার কেন অন্যদের চাইতে আলাদা!
চালকের আসন থেকে ব্যাকালারকে একটি দুর্দান্ত গাড়ি বলেই মনে হয়। দ্রুতগতির এবং শক্তসমর্থ, কিন্তু আরামদায়ক- ব্যাকালার সম্পর্কে এটাই বলা যায়।
এখন পর্যন্ত ব্যাকালারের ১২ টি প্রোডাকশন হয়েছে; যার প্রতিটিই ক্রেতার আলাদা আলাদা চাহিদামাফিক তৈরি। 'প্রতিটি গাড়িই সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী', বলেন হ্যানিগ।
ব্যাকালারের একই দামে হয়তো আপনি আরও গতিদানব ও বাহ্যিকভাবে চাকচিক্যময় গাড়ি খুঁজে পাবেন। কিন্তু ব্যাকালারের ক্রেতারা অবশ্য এর পারফরমেন্সের পেছনে টাকা ঢালছেন না। তারা গাড়িটির চমৎকার নকশার জন্যই নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করছেন। কারণ বেন্টলি ব্যাকালার এমন একটি গাড়ি, যাকে 'নিজের' বলে দাবি করার মধ্যে এক স্বর্গীয় সুখ আছে!
সূত্র- সিএনএন