সুখসন্ধানী

নাড়িসূত্র জিন্নাতুন জান্নাতের প্রদর্শনীর শিরোনাম। নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে প্রতিবাদে ইএমকে সেন্টার এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। শেকড় সন্ধান জান্নাতের উদ্দেশ্য। বানানটা একটু বদলালে মানে নারী সূত্র হলে, উদ্দেশ্য গিয়ে দাঁড়ায় নারীত্বের সূত্র সন্ধান। এটা এমন এক সূত্র যা নিজেকে বেঁধে নেয় অন্য সবার সঙ্গে। এটি আশারও সূত্র যা কোনো বিরোধ ছাড়াই গোটা সমাজকে একসূত্রে গাঁথে। শিল্পলেখক মোস্তফা জামান অন্তত এমনটাই বলছেন। রক্তিম বিন্যাসের ছবিগুলোতে শিল্পী এখানে নিজেকেই মেলে ধরছেন। সেসঙ্গে তাঁর সংসার ও দেশকে।
জান্নাত নারীদেহ বা মুখাবয়বের ওপর গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতীকগুলোকে স্থাপন করেন। নাড়িসূত্র কিংবা নারীসূত্র বিশেষ মনোযোগের দাবীদার এ কারণে যে বর্তমান অভিজ্ঞতা থেকে উপনিবেশিক ধ্বংসাবশেষ বিয়োগ করার উদ্যোগ নেয়। প্রায় সব ছবিতেই শূণ্য স্থান একটা বিশেষ জায়গা দখল করে আছে যা চিন্তা-ভাবনার সুযোগ করে দেয়। এটা বস্তুত একটি নান্দনিক হাতিয়ার যেমনটা অনুভব করি সঙ্গীতের উত্থান-পতনে, জান্নাতও তাঁর ছবিতে তেমন সৌন্দর্য গড়ে তুলতে পেরেছেন। গতানুগতিক শিল্পশৈলী থেকেও অনেক দূরে চলে এসেছেন জান্নাত। খুব সচেতনভাবেই শিল্পী মোটা ও ভারী রেখার প্রয়োগ করেছেন ছবিগুলোয়, চাইছেন একটি উর্বর মায়াময় জমিতে ভেসে বেড়াতে। অনেক ছবিতেই তিনি বড় করে বাঁধনহীন নারীদেহ বা মুখ এঁকেছেন যেমনটা পাওয়া যায় নক্সীকাঁথার মাঠে।
মোস্তফা জামান আরো লিখছেন, নারী সূত্র সমাজ ও নিজের মধ্যে যে ভাব তৈরি তাকে মাধুর্যই বলা যায়। এমন ভাবের প্রকাশ আমরা দেখি সন্ধ্যা মূলচন্দানির বইতে যা তিনি ভক্তি আন্দোলনের নারী কবি ও সাধুদের উৎসর্গ করেছেন। এ ভাব তো ভালোবাসা আর সুখের সীমাহীন প্রকাশ। জান্নাত তো সেই সুখের পথ খুঁজছেন যা নারী সূত্রে গ্রথিত আছে। আর তা করতে গিয়ে রেখা হয়ে উঠেছে তাঁর হাতিয়ার আর শূণ্যস্থান তাঁর শিল্পক্ষেত্র। জান্নাত বুঝতে পেরেছেন গ্রামীণ সংস্কৃতি এখনো সরল আছে। তাই তো সে সংস্কৃতির উপাদানকে তিনি ফিরিয়ে এনেছেন বারবার। এটা এভাবেও বলা যায় যে, তিনি নিজেই সেগুলো ফিরে ফিরে দেখেছেন। আর এমন করে দেখলে নবীন এই শিল্পীকে প্রশংসা না করে উপায় থাকছে না। উল্লেখ্য বাগেরহাট থেকে এসে জান্নাত পড়েছেন বিএএফ শাহীন কলেজে। তারপর ঢাকা চারুকলায়।
প্রদর্শনীটি চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা। ছুটির দিনগুলো বাদে।