রোরিং টোয়েন্টিজ, সাফোকেটিং টোয়েন্টি টোয়েন্টি

এতোই রমরমা ছিল উনিশ শত বিশের দশক, এমনই গলা ফাটিয়ে বলার মতো ছিল সেই দশকের কাহিনী, শত বছর পেছন ফিরে বিস্মিত হয়ে সবাই বলেন, রোরিং টোয়েন্টিজ।
নতুন দশক শুরু হবার এক বছর এক মাস উনিশ দিন আগে চারদিকে লক্ষ ক্ষত ও ধ্বংসযজ্ঞ রেখে প্রথম মহাযুদ্ধের অবসান ঘটেছে। ক্রাচে ভর দেওয়া পা হারানো সৈনিক রাস্তায় নেমেছে আর যুদ্ধ নয় ফেয়ারওয়েল টু আর্মস।
রোরিং শব্দটির ব্যবহার আগেও হয়েছে পশ্চিমের ঝড়ো বাতাস যখন পয়ত্রিশ থেকে ষাট ডিগ্রি অক্ষাংশে প্রবাহিত হতো নাবিকরা বলতেন রোরিং ফর্টি, বাতাসের বেগ আরো বেড়ে গেলে বলতেন, ফিউরিয়াস ফিফটিস, যখন অসহনীয় হয়ে উঠত বলতেন, স্ক্রিমিং কিংবা ক্রাইয়িং সিক্সটি। রোরিং ফিফটিজ নামে একটি জার্মান কমেডি চলচ্চিত্রও আছে। রোরিং টুয়েন্টিজ নামে একটি ক্রাইম থ্রিলার সিনেমাও আছে, রাউল ওয়ালশ পরিচালিত ১৯৩৯-র এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন হামফ্রে বোগার্ট, প্রিসিলা লেইন, জেমস কেগনি ও গ্ল্যাডিস জর্জ। অনেকে মনে করেন এই সিনেমার সাফল্য নামটাকে জনপ্রিয় করে তোলে। সিনেমার ঘটনার উল্লেখযোগ্য অংশই কুড়ির দশকের।
পঞ্চদশ শতকের অভিধানে রোর শব্দটি জন্তুর গর্জন হিসেবে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৩৬-এ ঝড়ো বাতাসের বর্ণনায় এসেছে রোরিং ফর্টিস, ১৮৯৪-তে রোরিং ফিফটিজ এর ব্যবহার দেখা যায়। ১৯২০ সালে রোরিং সেভেন্টিজ ব্যবহার করা হয়েছে আগের শতকের সত্তরের দশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে প্রকাশ করতে।
স্কট ফিটজেরাল্ড ১৯২০এর দশকেই রোরিং টোয়েন্টিজ বলেছেন- কেউ কেউ বলেছেন।

মহাযুদ্ধের অমানিশা শেষে হবার পর এই দশকটি ছিল আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পুনরুত্থানের যুগ এবং পুরোনো বেশ কিছু মূল্যবোধ ভেঙ্গে ব্যক্তিসত্তার নতুন করে জেগে উঠার যুগ।
১৯২০ দশকের ১৯২০ সালকে যদি রোরিং বলা হয় তাহলে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ২০২০ সালকে বর্ণনা করতে সম্ভবত একটি নিরলঙ্কার প্রতিশব্দই বেছে নিতে হবে 'সাফোকেটিং কিংবা স্টিফলিং টোয়েন্টি', শতবর্ষ আগে গর্জন বের হলেও এখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। কিংবা নিঃশ্বাস হয়ে উঠছে প্রায় রুদ্ধকর- সাফোকেটিং কিংবা স্টিফলিং।
এই নিবন্ধটিতে মূলত ১৯২০ দশকের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ও কর্মকান্ড স্মরণ করা হবে। বলা বাহুল্য রোরিং টোয়েন্টিজ আমেরিকান বিষয়, ততোটা ইউরোপিয় নয়; যদিও তার ঢেউ শিকাগো লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক সিটির বাইরে লন্ডন, প্যারিস, বার্লিন এবং সিডনিতেই প্রবল ভাবে লেগেছে। সাংস্কৃতিক গতিময়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, প্যারিসিয়ানরা বলতে শুরু করে ক্র্যাজি ইয়ার্স।
নারী পুরুষের বাহ্যিক চেহারা এমনই একাকার হয়ে যাচ্ছিল যে নতুন করে গান বাধতে হয় একালের ভাষায় সুপার হিট গান 'ম্যাসকুলিন ম্যান, ফেমিনিন ম্যান'। ১৯২৬ সালের এই রেকর্ড অনুসরণ করে পৃথিবীর সব সমৃদ্ধ ভাষাতে গান রচিত হয়েছে।
Masculine women, Feminine men
Which is the rooster, which is the hen?
It's hard to tell 'em apart today! And, say!
Sister is busy learning to shave,
Brother just loves his permanent wave,
It's hard to tell 'em apart today! Hey, hey!
Girls were girls and boys were boys when I was a tot,
Now we don't know who is who, or even what's what!
Knickers and trousers, baggy and wide,
Nobody knows who's walking inside,
Those masculine women and feminine men!

দেখা যাক রমরমা কুড়ির দশকে বিশ্বনেতৃত্ব কাদের হাতে ছিল?
বলশেভিক বিপ্লবোত্তর রাশিয়া/সোভিয়েত ইউনিয়নে ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন, জোসেফ স্ট্যালিন, যুক্তরাষ্ট্রে উড্রু উইলসন, ওয়ারেন হার্ডিং, ক্যালভিন কুলিজ, এবং হার্বার্ট হুবার। ব্রিটেনে ডেভিড লয়েড জর্জ, বোনার ল, স্ট্যানলি বল্ডউইন এবং র্যামজে ম্যাকডোনাল্ড, চীনে সান ইয়াং সেন ও চিয়াং কাইসেক। কানাডাতে ম্যাকেঞ্জি কিং, জার্মানিতে ফ্রেডরিখ এবার্ট, পল ফন হিল্ডেনবার্গ, জাপানে সম্রাট হিরোহিতো, স্পেনে কিং ত্রয়োদশ আলফনসো। ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনি, তুরস্কে মুস্তাফা কামাল পাশা, ইরানে রেজা শাহ পাহলভি, ভেটিকানের নেতৃত্বে একাদশ পোপ পায়াস। এসব নামের পাশাপাশি ট্রাম্প জনসন মোদি এমন তুলনা করে দেখুন। কেবল লেনিন যে পরিমাণ লেখালেখি করেছেন একালের বহু নেতা সবমিলিয়ে এতটুকু পড়াশোনাও করেননি। কাজেই তফাৎটা স্পষ্ট।
সে সময়ের বিজ্ঞানী কারা ছিলেন?
আলবার্ট আইনস্টাইন, আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং, নিল বোর, ওয়ার্নার আইসেনবার্গ, সিগমুন্ড ফ্রয়েড, হারবার্ড কার্টার প্রমুখ।
সবচেয়ে বেশি মেধার সমাবেশ ঘটেছে সাহিত্যে। কেবল নামগুলো বিবেচনা করুন : উইলিয়াম ফকনার, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, স্কট ফিটজেরাল্ড, বার্টল্ট ব্রেখট, টিএস এলিয়ট, ল্যাঙ্গস্টন হিউজেস, উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস, সিঙ্কলেয়ার লুইস, টমাস মান, কার্ল স্যান্ডবার্গ, এরিখ কাস্টনার প্রমুখ।

চার্লি চ্যাপলিন থাকবেনই
১৯২০-র দশকের অভিনেতা ছবি, নির্মাতা কারা ছিলেন? চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন তো? অবশ্যই। নির্মাতা ও অভিনেতা অভিনেত্রীদের মধ্যে আরো ছিলেন বাস্টার কিটন, ম্যারি অ্যাস্টর, জোসেফিন বেকার, ইথেল ও লায়োনেল ব্যারিমোর, জোয়ান ক্রফোর্ড, ম্যারিয়ন ডেভিস, ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্ক, গ্রেটা গার্বো, ডরোথি ও লিলিয়ান গিশ, বেবে ড্যানিয়েল, উইলিয়াম হেইলেস, আলফ্রেড হিচকক প্রমুখ।

সে সময়ের সঙ্গীত শিল্পীর তালিকায় ছিলেন লুই আর্মস্ট্রং, আরভিং বার্লিন, জর্জ গ্রেশউইন, জিমি রজার্স, আর্ল জনসন, লুনি জনসন, বেসি স্মিথ, কিং অলিভার, ফ্লেচার এন্ডারসন, কোল পোর্টার, ডিউক এন্ডারসন, কাউন্ট ব্যাসি প্রমুখ।
চিত্রশিল্প ও স্থাপত্যে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ মেধা বিকাশ ঘটে সে সময়েই। নামগুলো বিস্ময় জাগায়: সালভাদর দালি, পাবলো পিকাসো, পল ক্লি, ভ্যাসিলি ক্যান্ডিনিস্কি, ম্যাক্স আর্নস্ট, আদ্রে ব্রেতো, কার্লা ক্লারা, মার্ক শাগাল, স্টুয়ার্ট ডেভিস, মার্সেল ডুচ্যাম্প, ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট, ম্যাক্স আর্নস্ট, লে কুরবসিয়ে, ওয়াল্টার গ্রোপিয়াস, মার্সেল ব্রেয়ুয়ার, আলবার্তো গিয়াকোমেতি প্রমুখ। তখনকার প্যারিসকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছেন এ মুভেবল ফিস্ট।
সে সময় বাজারে বাণিজ্যিক ভাবে অটোমোবাইল নেমেছে, মানুষের জীবনে গতি ও উত্তেজনা সঞ্চারিত হয়েছে, টেলিফোন এসেছে, নির্বাক যুগ শেষে সবাক চলচ্চিত্র আসতে শুরু করেছে টেলিফোন দূরের মানুষের স্বর কাছে নিয়ে এসেছে।
মাঝখানে সারে তিন হাজার মাইল আর আটলান্টিক মহাসাগর। ১৯২৭-এর ৭ জানুয়ারি প্রথম ট্রান্স আটলান্টিক কথোপকথন হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে দূরপাল্লার টেলিফোন চালু হয়ে গেল।
বাড়ি বাড়ি রেডিও আর ইলেকট্রিসিটি পৌঁছে গেছে, উৎপাদন ও শিল্পে অবিশ্বস্য প্রবৃদ্ধি, ভোক্তার চাহিদা ও প্রত্যাশার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের ধরণ দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে। পুরোনো প্রজন্মের মানুষ এতো পরিবর্তন দেখে থ হয়ে রইলেন, না পারছেন সইতে না পারছেন ঠেকাতে।
১৯২০-এর দশকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন:
হাঙ্গার উপন্যাস খ্যাত নুট হামসুন ১৯২০, আনাতোলে ফ্রঁসে ১৯২১, জাসিন্তো বেনাভানতে ১৯২২, উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস ১৯২৩, ভ্লাডিস্লাভ স্ট্যানিস্লাভ রেয়মন্ট ১৯২৪, জর্জ বার্নার্ড শ ১৯২৫, গ্রাজিয়া দেলেদ্দা ১৯২৬, হেনরি বার্গস ১৯২৭, সিগরিদ উনসেত ১৯২৮ এবং টমাস মান ১৯২৯।
পদার্থবিজ্ঞান:
চার্লস এদুয়ার্দ গিওম ১৯২০, আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯২১, নিলস বোর ১৯২২, রবার্ট মিলিকান ১৯২৩, ম্যান সিবান ১৯২৪, জেমস ফ্রাঙ্ক ১৯২৫, গুস্তাভ হার্জ ১৯২৫, জা বাপতিস্তে পেরিন ১৯২৬, আর্থার কম্পটস ১৯১৭, টম্সন রিস উইলসন ১৯২৭, গুয়েন রিচার্ডসন ১৯২৮ এবং লুই ভিক্টর পিয়েরে ব্যায়মন্ড ১৯২৯।
রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য মানব সভ্যতার জন্য শ্রেষ্ঠ অবদান রাখা ক'জনকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।
শান্তি বরাবরই আলেয়ার মতো। এই দশকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ক'জন ব্যক্তি পুরস্কৃত হয়েছেন, কিন্তু শান্তি যে সহজে আমার নয় তা প্রমাণ করে দিয়েছে হিটলারের উত্থান। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন জার্মান যে ভয়ঙ্কর শর্তে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল তার ভেতরই নিহিত ছিল আর একটি মহাযুদ্ধের প্ররোচনা।
কুড়ির দশকের হেমিংওয়ে
রোরিং টোয়েন্টিজ রাজনৈতিক উদারতাবাদের বিজয় ঘোষণা করে, এমনকি জার্মানিতেও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধিতা চলতে থাকে। উদারতাবাদ বা লিবারেলিজম নামের রাজনৈতিক দর্শন থেকে কতোগুলো সামাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে বিকশিত হতে শুরু করে--সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদ, ধর্মীয় ও জাতিগত সহনশীলতা, স্বাধিকার, মুক্তবাজার অর্থনীতি, জনপ্রতিনিধিত্ব, দায়িত্বশীল সরকার, মুক্তবাণিজ্য, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার। এই সহনশীল উদারতাবাদই লীগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠার দার্শনিক ভিত্তি।

রোরিং টোয়েন্টিজ সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এনে দেয় নারীর জীবনে। তাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্দীদশা শেষ হয়ে আসে এবং ঘরে, কাজে, শিক্ষায়, সমাজে ও রাজনীতিতে তারা নিউ ওমেন হিসেবে আর্বিভূত হয়। নারীর ভোটাধিকার এবং রাজনীতিতে প্রবেশাধিকার ঘটে। কোথাও কোথাও নারী তার যৌন ও প্রজনন অধিকার পুরোমাত্রায় প্রয়োগ করতে শুরু করে। এমনকি টাইমস এর মতো পত্রিকাও তখন লিখে ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের ভোটাধিকার দেয়া পরিণতি খুব খারাপ হবে।

কুড়ির প্রজন্ম অনেক ট্যাবু ভেঙ্গে দেয়। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শহুরে বিবাহিত নারীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেতনভিত্তিক চাকরিতে যোগ দেয়; নারীকে আরো স্বাধীনতা এনে দেয় জন্মনিরোধক সামগ্রীর প্রাপ্তি ও ব্যবহার। আমেরিকান নারীর ৪০০ বছরের পুতুল জীবনের সমাপ্তি ঘটতে থাকে- 'স্মোকিং ড্রিঙ্কিং অ্যান্ড সেক্স' তারা ইচ্ছে অনুযায়ী পুরুষের মতোই ভোগ করবে এমন একটি দরজা খুলে যায়। টোয়েন্টিজের প্রথম শিক্ষিত নারী প্রজন্মের চাকরি ক্ষেত্র কেবল 'ফিমেইল জব'-এ সীমিত পরিসরে নার্সিং, টিচিং, সমাজকর্ম এবং চিকিৎসা তবে কেবল শিশু চিকিৎসা। ধীরে ধীরে তা ভাঙ্গতে শুরু করল। তারপর বাধা রয়ে গেল গর্ভবতী নারী চাকরি হারাবে, নারীকে জুরি বোর্ডের সদস্য করা হবে না, নাইট শিফটে কাজ দেওয়া যাবে না, এমন আরো অনেক কিছু যা কালক্রমে অপসৃত হয়।

১৯২০-র দশককে সেক্সুয়াল রেভ্যুলুশনের দশক বলা চলে। লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, রোম প্যারিসসহ বড় বড় নগর কেন্দ্রে সমকামিতা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করে। সমকামিতার অধিকার ও সামাজিক স্বীকৃতির দাবিও উঠতে থাকে। থার্ড সেক্স ইস্যু সামনে আসে। প্রায় প্রতিটি শহরেই কমিউনিস্ট আন্দোলনও দানা বাধতে থাকে। আবার রাষ্ট্রসমুহ আন্দোলন দমাতেও তৎপর হয়ে উঠে। রোরিং টোয়েন্টিজের উচ্ছা্স দশকের শেষে এসে আধুনিক অর্থনীতির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দা- দ্য গ্রেট ডিপ্রেশনে ম্লান হয়ে আসতে থাকে। এই মহামন্দার ধাক্কা সারা পৃথিবীতে পড়ে।
যুদ্ধের গর্জন ছিল, একই সঙ্গে ১৯২০ এর দশকে জাজ সঙ্গীতে উচ্চরব আর ড্রামের বিপুল নিনাদ শোনা যায়। ভারী কামান ও মর্টারের শব্দ অনেক সময় ড্রামবিটকে ম্লান করে দিয়েছে। এ সময় অন্তত পনেরটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে।

১. তুর্কি স্বাধীনতা যুদ্ধের অংশ হিসেবে চারটি ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধ হয়েছে : গ্রিস-তুর্কি যুদ্ধ, তুর্কি-আর্মানিয় যুদ্ধ, ফ্রান্স-তুরস্ক যুদ্ধ এবং রাজানুগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যুদ্ধ
২. সৌদি আরব একীভূত করার যুদ্ধের অংশ হিসেবে চারটি যুদ্ধ: রাশিদি-সৌদি যুদ্ধ, কুয়েত-সৌদি যুদ্ধ, হেজাজ-সৌদি যুদ্ধ, ট্রান্সজর্ডান সৌদি যুদ্ধ
৩. পোল্যান্ড- সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধ
৪. আইরিশ স্বাধীনতা যুদ্ধ
৫. ইরাকের ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধ
৬. মরক্কোতে স্পেন বিরোধী রিফ যুদ্ধ
৭. লিবিয়ান পেসিফিকেশন- ইতালির বিরুদ্ধে লিবিয়া সোমালিয়া ও ইরিত্রিয়ার যুদ্ধ
৮. যুক্তরাষ্ট্রের নিকারাগুয়া দখল
৯. যুক্তরাষ্ট্রের হেইতি দখল
১০. যুক্তরাষ্ট্রের ডোমিনিকান রিপাবলিক দখল।
১১. রুশ গণযুদ্ধ
১২. চীনা গণযুদ্ধ
১৩. আফগান গণযুদ্ধ
১৪. আইরিশ গণযুদ্ধ
১৫. চিলিতে সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র নিকারাগুয়া হেইতি ও ডোমিনিকান রিপাবলিকে দখলের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠে।
রাজনৈতিক ভাবে পরস্পর বৈরি কমিউনিজম এবং ফ্যাসিজমের ব্যাপক বিকাশ ঘটতে থাকে।
সাফোকেটিং টোয়েন্টি টোয়েন্টি
১৩৪৭ থেকে ১৩৫১ পর্যন্ত মেঘ সূর্যকে ঢেকে রাখেনি, সূর্যটাই কালো ছিল ইউরোপের আকাশে। সেবার এসেছিল ব্ল্যাক ডেথ- প্লেগ। কালো সূর্য এবার পৃথিবীর আকাশে। সময়টা ২০২০।
একটি বাক্যে যদি ২০২০-কে বর্ণনা করতে বলা হয় তাহলে সম্ভবতঃ ধ্রুপদ বাক্য হিসেবে সামনে এসে দাড়াবে: আই ক্যান্ট ব্রিথ- আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। সাদা পুলিশের হাঁটু যখন কালো মানুষের শ্বাসযন্ত্র চেপে ধরে, আমি শ্বাস নিতে পারছি না--এই একই কথা বহুবার উচ্চারণ করে নিঃশব্দ নিঃস্পন্দ হয়ে যায় জর্জ ফ্লয়েড। সাদা পুলিশ ডেরেক শভিন তার মৃত্যু নিশ্চিত করতেই চেয়েছে। প্রকৃতি পৃথিবীকে শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটর, ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট কোনোটাতে পরিত্রাণ নেই। পৃথিবীর ইতিহাস দেখিয়েছে মহামারীতে সরকারি ভাষ্য মিথ্যে হয়ে থাকে। মৃত্যুর হিসেব ও আক্রান্তের হিসেবের সাথে নিজের ব্যর্থতা জড়িয়ে আছে বলে সংখ্যাটা কমিয়ে বলে। তবুও তাদের হিসেবটা বলে দেবে টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে মানুষ কতোটা অসহায়। ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ রাতের বেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত মোট ব্যক্তির সংখ্যা ২১৮টি দেশে ৮ কোটি ৩২ লক্ষ ৬ হাজার; আর করোনা মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ ১৫ হাজার, আর তা বেড়েই চলেছে। প্রথম কিংবা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ পৃথিবীর সকল দেশকে স্পর্শ করেনি। এমনকি মধ্যযুগের প্লেগ, শতবর্ষ আগের স্প্যানিশ ফ্লু-ও সকল দেশে পৌঁছেনি। করোনাভাইরাস উদ্ভুত কোভিড-১৯ কোনো না কোনো ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না।
২১মার্চ শিকাগোর জনবহুল রাস্তায় লকডাউন
টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে মানুষ ফোন ধরতে ভয় পায়--মৃত্যু সংবাদ নয় তো? মানুষও মুখোশে, মানুষ মৃত্যুর ডাক শুনতে পাচ্ছে। সুক্ষাতিসূক্ষ ভাইরাস কোনো না কোনো পথে শ্বাসনালীতে ঢুকে পড়ছে। মানুষ লক ডাউনে আছে, মানুষ সোশাল ডিসট্যান্স মেনে চলছে, মানুষ আর করমর্দন করে না, মানুষ আর আলিঙ্গন করে না- মানুষ মানুষের মৌল চরিত্র ভুলতে বসেছে।
এমনই কাল টোয়েন্টি টোয়েন্টি।
ওয়াশিংটন পোস্ট এক শব্দে এই বছরের অভিজ্ঞতা বলার জন্য পাঠকদের আহ্বান জানিয়ে ছিল। সবচেয়ে বেশি সাড়া দেওয়া শব্দটি হচ্ছে: শিট।